এক বিখ্যাত ব্যবসায়ী। তার নাম ইউনুস ইবনে আবিদ। কাপড়ের ব্যবসা করতেন তিনি। তার দোকানে বিভিন্ন দামের কাপড় ছিল। তন্মধ্যে এক জোড়া কাপড়ের দাম ছিল দু শ টাকা, আরেক জোড়া কাপড়ের দাম চারশ টাকা। কাপড়ের দেকানটি ছিল বেশ বড়। খুবই সুন্দর ।
তিনি ইসলামী বিধান মােতাবেক সততার সাথে ব্যবসা করতেন। ফলে অল্প দিনেই তার সুনাম সুখ্যাতি গােটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসার কাজকর্ম দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় গত কিছুদিন পূর্বে তিনি একজন কর্মচারী নিয়েছেন। কর্মচারীটি সম্পর্কে তার ভাতিজা হয়।
একদিন তিনি ভাতিজাকে দোকানে রেখে নামাজ পড়তে গেলেন। এমন সময় এক বিদেশী খরিদ্দার এসে চারশ টাকা মূল্যের এক জোড়া কাপড় দিতে বলল। কর্মচারী ছেলেটি দু শ টাকা মূল্যের কাপড় জোড়া বের করে দেখালে সেটিই তার পছন্দ হলাে এবং কোনাে কথাবার্তা না বলে অত্যন্ত খুশি মনে এ জোড়াই চারশ টাকায় নিয়ে গেল। পথিমধ্যে ব্যবসায়ী ইউনুসের সাথে ঐ ক্রেতার সাক্ষাত হলাে।
ব্যবসায়ী নিজের দোকানের কাপড় দেখে জিজ্ঞস করলেন-
-কত টাকা দিয়ে কিনেছেন?
-চারশ টাকায়।
-চারশ টাকায়?! ব্যবসায়ীর দু চোখে বিস্ময়
-হ্যাঁ, চারশ টাকা দিয়েই খরিদ করেছি।
-এ জোড়ার মূল্য তাে দু শ টাকার বেশি নয়।
-কেন? আমাদের দেশে তাে এ জোড়া পাচঁশ টাকায় বিক্রি হয়।
- তা হতে পারে। কিন্তু আমি উহা দু শ টাকার অধিক মূল্যে বিক্রি করি না।
- দোকানের কর্মচারীকে চারশ টাকা মূল্যের কাপড় জোড়া বের করতে বললে, সে আমাকে এ জোড়া কাপড়ই বের করে দেখাল। কাপড় পছন্দ হওয়ায় আনন্দচিত্তেই আমি চারশ টাকা দিয়ে উহা ক্রয় করে নিয়ে এসেছি। ব্যবসায়ী ইউনুস আর কথা বাড়াল না। 'আপনি মেহেরবানী করে আমার সাথে দোকানে চলুন এ বলে তিনি ক্রেতাকে নিয়ে পুনরায় দোকানে গেলেন। তারপর দু'শ টাকার দু'টি নোট ক্রেতার হাতে উঠিয়ে দিয়ে বললেন, জনাব! এ অনাকাঙ্ক্ষি ভুলের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আশা করি নিজ গুণে আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। ব্যবসায়ী ইউনুসের সুমধুর আচরণ ও তার গম্ভীর শান্ত মিষ্টি কণ্ঠস্বরে বিদেশী লােকটি মুগ্ধ হলাে।
সে মনে মনে চিন্তা করতে লাগল, আমি বিদেশী মানুষ।।জীবনে আর কখনাে হয়তাে এখানে আসা হবে না। আমাকে পুনরায় এনে অতিরিক্ত মূল্য ফিরিয়ে দেওয়ার কোনাে প্রয়ােজন তার ছিল না। কেননা এতে ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তার নাই বললেই চলে। আসলে লােকটির সততা ও সত্যবাদিতাই তাকে এরূপ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এসব কথা চিন্তা করতে করতে লােকটি দোকান থেকে বিদায় নিল। ক্রেতা চলে যাওয়ার পর ব্যবসায়ী ইউনুস ভারতিজাকে ধমকের স্বরে বললেন, ভাতিজা! তােমার কি খােদার ভয় নেই? তােমার কি লজ্জা হলো না- একশ টাকায় একশ টাকা মুনাফা করতে? তুমি কি জান না, মানুষকে ধােকা দিলে, তাদের সাথে ইনসাফী আচরণ না করলে পরকালে খােদার দরবারে জবাবদিহি করতে হবে? মুসলমানদের মঙ্গল কামনা কি তােমার অন্তরে নেই?
ছেলেটি বলল, চাচাজান! তিনি নিজেই যেখানে খুশি হয়ে দিগুণ দিয়ে মূল্য কাপড় জোড়া নিয়ে যেতে রাযি হচ্ছেন, সেখানে আমি কেন সেধে সেধে মুনাফার পরিমান কমাতে যাব? এমন বােকামী দুনিয়াতে কেউ করে নাকি? চাচা বললেন, হ্যা করে।
যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে তারা করে। আর তােমার দৃষ্টিতে উহা বােকামী বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা মােটেও বােকামী নয়। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির মাধ্যমে কেবল মুনাফা অর্জনই মুমিন ব্যক্তির উদ্দেশ্য নয়, ররং এর মাধ্যমে মানুষের খেদমত করে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করাও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। তুমি আজ যা করেছিলে এর দ্বারা প্রথম উদ্দেশ্য সফল হলেও দ্বিতীয় উদ্দেশ্য সফল হত না। অর্থাৎ মুনাফা অর্জন হলেও মানুষের খেদমত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হত না।
কারণ হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তােমরা ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তােমরা নিজের জন্য যা পছন্দ কর, অপর ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ কর। এবার তুমিই বল, বিদেশী এ ক্রেতার কাছ থেকে তুমি যে পরিমান লাভ করলে, এরূপ লাভ অন্য কেউ তােমার থেকে করলে তুমি কি তা পছন্দ করতে? নিশ্চয়ই করতে না।
এ বিষয়টি এতক্ষণে ভাতিজার বুঝে আসল। সে বলতে লাগল, চাচাজান! আমাকে ক্ষমা করুন। আমি ভবিষ্যতে আর কখনােই এরূপ করবনা।
প্রিয় পাঠক! ভাতিজার সাথে সাথে আমরা ব্যবসায়িরাও যদি এ বিষয়টি ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করে আজ থেকেই পুরােপুরি আমল শুরু করে দেই, তবেই এ ঘটনা লিপিবদ্ধ করা সর্বোতােভাবে সার্থক হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক নসীব করুন। আমীন।
(সূত্র- ইস্তিয়াব, পৃষ্ঠা-১৩৪)
0 মন্তব্যসমূহ