বদরের যুদ্ধ কিছুক্ষণ পর শুরু হবে। উভয় পক্ষ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। ঠিক এমন সময় দু জন সাহাবী ময়দানে এসে উপস্থিত হলেন। হৃদয় ভরা প্রত্যয় ও প্রত্যাশা নিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা মক্কা থেকে এসেছি।
পথিমধ্যে আমরা কাফেরদের হাতে বন্দি হয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত তারা আমাদের এই শর্তে মুক্তি দেয় যে, আমরা যুদ্ধে আপনার পক্ষে যােগদান করব না।
ভীতি, দ্বিধা বা কোনাে পিছুটান তাঁদের রুখতে পারবে না। এমন একটি অমলিন চেতনার সৌরভ তাদের কথােপকথনে ছড়িয়ে পড়ছিল। তারা নিশ্চিত ছিলেন, আল্লাহর রাসূল এ অবস্থায় তাঁদের হতাশ করবেন না, উল্টো যুদ্ধে যাওয়ার পথে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করে তুলবেন। পথে কাফেরদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি, যুদ্ধে না জড়ানাের শর্তের মত মামুলি বিষয়টি এখানে পাত্তাই পাবে না। কিন্তু তাদের নিশ্চিত হওয়া দিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৃঢ় কণ্ঠে ঘােষণা কিছুতেই না। তােমরা তােমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর। যুদ্ধের ময়দান থেকে চলে যাও। আমরা মুসলমানদের কৃত অঙ্গীকার সর্বাবস্থায় পালন করব।
আমাদের কেবল আল্লাহ তায়ালার সাহায্যই প্রয়ােজন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কণ্ঠে কোনো রাগ ছিল না, ছিল না তার মুখে অপ্রসন্নতার কোনাে ছাপ। ছিল না আচরণে নূন্যতম অসহিষ্ণুতার কোনাে চিহ্ন। বরং মুসলমানদের ওয়াদার আকাশ সমান মূল্যের ঘাটতি হতে না দেওয়ার একটি অপার্থিব দৃঢ়তার ধ্বনি ফুটে উঠেছিল তাঁর মুখনিসূত বাণী থেকে।
মানবীয় প্রয়ােজন কিংবা তীব্র প্রয়ােজন শুধু নয়; আল্লাহর দীনের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামেও অঙ্গীকার ভঙ্গের কোনাে পথ ধরে যেন কেউ বিপথে হেঁটে না যায় সেই ফরমান ঝরে পড়ছিল তাঁর আচরণ থেকে।
থমকে গেলেন দুই সাহাবী। মামুলি মূল্যবােধের ঘুণে ধরা ফ্রেম ভেঙ্গে তাদের হৃদয়ে উদয় হলাে সমৃদ্ধ, প্রাচুর্যময় ও জীবনবাদী এক অমর মূল্যবােধের। অবাক হয়ে সাহাবীগণ দেখলেন, ঈমানদীপ্ত নীতির পাহাড়ে মানবীয় প্রয়ােজনের ভঙ্গুর ডিঙ্গি এসে ধাক্কা দিতে পারে না।
প্রিয় পাঠক! বদর যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমান সৈন্যের সংখ্যা যেখানে খুবই সামান্য, সেখানে দু জন সাহাবীর যুদ্ধে অংশ গ্রহণে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা অবশ্যই কিছুটা বৃদ্ধি পেত। কিন্তু ওয়াদা পালন সর্বাবস্থায় জরুরী- এ কথা কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানব জাতিকে শিক্ষা দানের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত রাখলেন। হে আল্লাহ! আমাদেরকেও তুমি রাসূলের আদর্শে আদর্শবান হয়ে ছােট বড় যে কোনাে ধরণের অঙ্গিকার পালন করার তাওফীক দান কর। আমীন।

0 মন্তব্যসমূহ